সিয়ামের হুকুম-আহকাম

 

সিয়ামের হুকুম-আহকাম



সাহরি খাওয়া

আল্লাহর কত দয়া! তিনি আমাদের জন্য ইসলামকে কত সহজ করেছেন! সাহরি খাওয়া

আমাদের নিজেদের জন্যই প্রয়োজন। অথচ আল্লাহ এ কাজটিকেও ইবাদত বানিয়ে দিয়েছেন

। সেহরি খেলে আল্লাহ খুশি হন এবং সওয়াব দেন। বিভিন্ন হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়াসাল্লাম সাহরি খেতে নির্দেশ দিয়েছেন। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

السحور أكله بركة فلا تدعوه ولو أن يجرع أحدكم جرعة ماء فإن الله عز وجل وملائكته يصلون على المتسحرين-

“তোমরা সাহরি খাওয়া ছাড়বে না, যদি এক ঢক পানি পান করেও হয় তবুও। কারণ যারা

সাহরি খায় তাদের জন্য আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ রহমত ও দোয়া করতে থাকেন।”(মুসনাদ আহমেদ ৩/১২)

কোন কোন হাদিসে সাহরিতে খেজুর খেতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। সাহরি খাওয়ার ক্ষেত্রে

রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত ও শিক্ষা হল, একেবারে শেষ মুহূর্তে সাহরি খাওয়া।

জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 

تسحرنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم قمنا إلى الصلاة قلت كم كان قدر ما بينهما قال خمسين آية-

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সাথে সাহরি খেলাম। এরপর ফজরের সালাতে

দাঁড়ালাম।” জায়েদ কে জিজ্ঞাসা করা হলো মাঝে কতটুকু সময় ছিল তিনি বলেন ৫০ আয়াত

তেলাওয়াতের মত। (সহীহ বুখারী ২/৬৭৮, সহীহ মুসলিম ২/৭৭১) 

ইফতার করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সুন্নত সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা। তিনি এত

তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন যে অনেক সময় সাহাবীগণ বলতেন, “হে আল্লাহর রাসূল! সন্ধ্যা

হক না, এখনো তো দিন শেষ হলো না।” তিনি বলতেন, “সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করতে

হবে।” 

বিভিন্ন হাদিসে রয়েছে যে, রাসূল (সাঃ) এর সাহাবীগণ সর্বদা শেষ সময় সেহরি করতেন এবং সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে

ইফতার করতেন। 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

 لا يزال الناس بخير ما عجلوا الفطر-

“যতদিন তোমরা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, ততদিন তোমরা কল্যাণে থাকবে।” (সহিহ বুখারি

২৬৯২, মুসলিম ৭৭১)

রাসুল (সাঃ) বলেন, 

 إنا معشر الأنبياء أمرنا بتعجيل فطرنا وتأخير سحورنا-

আমরা নবীগণ আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রথমে অর্থাৎ প্রথম সময়ে ইফতার করতে

এবং শেষ সময়ে সেহরি খেতে। (মাজমাউজ যাওয়াইদ ২/১০৫, হাদিসটির সনদ সহিহ) 

ইফতারের জন্য খেজুর মুখে দিয়ে ইফতার করা

রাসূল (সাঃ) সম্ভব হলে গাছপাকা টাটকা খেজুর না হলে খুরমা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন।

খেজুর না পেলে তিনি পানি মুখে দিয়ে ইফতার করতেন। ‍তিনি ৩টি খেজুর খেতে পছন্দ

করতেন। (যিয়া মাকদিসী, আল মুখতারাহ ৫/১৩১, ১৩২)

এ বিষয়ে আরো অনেক সহি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সেহরি ও ইফতার খাওয়ার অর্থ এই নয় যে,

সারাদিন যেহেতু খাব না সেহেতু এ দু সময়ের খাওয়া একবারেই খেয়ে নেই-সারাদিন যাবত

কাটবো; এরূপ খেলে তা সিয়ামের মূল উদ্দেশ্যই নষ্ট হল। সেহরি ও ইফতার খাওয়ার অর্থ,

স্বাভাবিকভাবে আমরা যা খাই তা খাওয়া। সমাজে প্রচলিত আছে যে, সেহরি ও ইফতারিতে

যা খাওয়া হবে তার হিসাব হবে না। এজন্য আমরা রমজান মাসকে খাবার মাস বানিয়ে

ফেলেছি। বস্তুত হিসাব হবে কিনা হবে তা নিয়ে চিন্তা না করে ছাওয়াব কিসে বেশি হবে তা

চিন্তা করা দরকার। 

খাওয়ানোর মাস রমাদ্বান 

দু’ভাবে খাওয়ানোর নির্দেশ রয়েছে হাদিসে। প্রথমত দরিদ্রদেরকে খাওয়ানো এবং দ্বিতীয়ত

রোজাদারকে ইফতার খাওয়ানো। রোজা অবস্থায় দরিদ্রকে খাওয়ানোর ফজিলত অনেক। 

ইফতার করানোর বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

 من فطر صائما كان له مثل أجره غير أنه لا ينقص من أجر الصائم شيئا-

“যদি কেউ কোন সাউম পালনকারীকে ইফতার করায়, তাহলে সে উক্ত সাউম পালনকারীর

সমান সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। তবে এতে উক্ত সাউম পালনকারীর একটুও সওয়াব

কমবে না।” (তিরমিযি ৩/১৭১, হাদিসটির সনদ হাসান) 

ইফতার করানো অর্থ আনুষ্ঠানিকতা নয়। নিজেদের ইফতার প্রতিবেশীকে দিয়ে এবং প্রতিবেশী

র ইফতার নিজে  খেয়েও এই সাওয়াব পাওয়া যায়। নিয়মিত নিজেদের খাওয়া থেকে সামান্য

কমিয়ে অন্য দেরকে ইফতার করানো বিশেষত দরিদ্র কর্মজীবী, রিক্সাওয়ালা এরা অনেকেই

কষ্ট করে সাওম রাখেন এবং ইফতার করতে তাদের কষ্ট হয়। সাধ্যমত নিজেদের খাওয়া একটু

কমিয়ে এদেরকে খাওয়ানো দরকার। 

হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রামাদান মাসে যারা সিয়াম পালন করেন তাদের দুটি

শ্রেণী রয়েছে। (এক) পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে (দুই) আরেক শ্রেণি যাদের ক্ষুধা

পিপাসায় কষ্ট করা ছাড়া কিছুই হয় না। 

প্রথম শ্রেণীর সাওম পালনকারীর বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 من صام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من جنبه-

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং আল্লাহর নিকট সওয়াব অর্জনের খাঁটি নিয়তে রমাদানের

সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (সহিহ বুখারী ১/২২, সহীহ

মুসলিম ১/৫২৩)

২য় প্রকারের সাওম পালনকারীদের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) বলেন, 

 رب صائم ليس له من صيامه إلا الجوع ورب قائم ليس له من قيامه إلا السهر-

“অনেক সিয়াম পালনকারী আছে যার সিয়াম থেকে শুধু ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া আর কোন লাভ

হয় না এবং অনেক কিয়ামকারী বা তারাবি/তাহাজ্জুদ পালনকারী আছে যাদের কিয়াম তারাবি

থেকে শুধু রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কোনই লাভ হয় না। (সুনানে ইবনু মাজাহ ১/৫৩৯)

যারা সাওম পালন করে না তাদের দুর্ভাগ্যের কথা জানিয়ে রাসুল (সাঃ) বলেন, 

ّ“যে ব্যক্তি রমদ্বান পেল অথচ কিন্তু এই মাসে তাকে ক্ষমা করা হলো না, সেই ব্যক্তি আল্লাহর

রহমত থেকে চির বঞ্চিত-বিতাড়িত।” (মুস্তাদরাকে হাকেম ৪/১৭০) 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, 

 ليس الصيام من الأكل والشرب إنما السيم من اللغو والرفث-

“শুধু পানাহার বর্জনের নাম সিয়াম নয়; সিয়াম হল অনর্থক ও অশ্লীল কথা কাজ বর্জন করা।”

(সহীহ ইবনু হিব্বান ৮/২৫৫) 

তাহলে বলা যায়- চিন্তাহীন, অনুধাবনহীন, সৎকর্মহীন, পানাহার বর্জন উপবাস বলে গণ্য হতে

পারে তবে ইসলামী সিয়াম বলে গণ্য হবে না। হারাম বা মাকরুহ কাজে-কর্মে রত থেকে হালাল

খাদ্য ও পানীয় থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখার নাম সিয়াম নয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য

সকল হারাম বর্জন করার সাথে সাথে হালাল খাদ্য পানীয় ও সম্ভগ থেকে নিজেকে বিরত রাখাই

হলো সিয়াম।

এভাবে হৃদয়ে সার্বক্ষণিক আল্লাহর ভয়, সচেতনতা, আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে লক্ষ্য করে সততা

ও নিষ্ঠার পথে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্যই সিয়াম।

যদি আপনি কঠিন ক্ষুধা বা পিপাসায় কাতর হয়েও আল্লাহর ভয়ে ও তার সন্তুষ্টির আশায় নিজেকে

খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত রাখেন অথচ সামান্য রাগের জন্য গালি-ঝগড়া ইত্যাদি হারাম কাজে

লিপ্ত হন মিথ্যা অহংবোধকে সমুন্নত করতে পরনিন্দা গীবত চোগলখুরি ইত্যাদি ভয়ংকর

হারামে লিপ্ত হন। সামান্য লাভের জন্য মিথ্যা বলে আপনি নিশ্চিত জানেন যে আপনি

সিয়ামের নামে আত্মঘাতি কাজে লিপ্ত আছেন। ধার্মিকতা ও ধর্ম পালনের মিথ্যা অনুভূতি ছাড়া

আপনার কিছুই লাভ হচ্ছে না।

এ মর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

 من لم يدع قول الزور والعمل به والجهل فليس لله حاجة أن يدع طعامه وشرابه

“যে ব্যক্তি পাপ, মিথ্যা বা অন্যায় কথা, অন্যায় কর্ম, ক্রোধ, মূর্খতাশুলভ ও অজ্ঞান মূলক কর্ম

ত্যাগ করতে না পারবে তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই।”

(সহীহ বুখারি দ্বিতীয় খন্ড ৬৭৩ নাম্বার হাদিস)

আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, 

“তোমরা সাওমের দিনে পানাহার করো না।”

এর পরের আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, 

“তোমরা অপরের সম্পদ অবৈধভাবে আহার করো না।”

এখন আপনি প্রথম আয়াতটি মেনে দিবসে পানাহার বন্ধ রাখলেন। আর আপনার পরের

আয়াতটি মানলেন না। সুদ, ঘুষ, জুলুম, চাঁদাবাজি, যৌতুক, মিথ্যা মামলা, জবরদখল, সরকারি

সম্পত্তি অবৈধ দখল ইত্যাদি নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করলেন। তাহলে

আপনি কেমন সায়েম বা রোজাদার? 

একটি বিশেষ আহার হল গীবত। গীবত শতভাগ সত্য কথা, যা তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে। তবে

তার অনুপস্থিতিতে তা অন্য কাউকে বলা বা আলোচনা করাই গীবত। 

আল্লাহ বলেছেন, 

“গীবত করা হলো মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া (সমতুল্য)।”

মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করার মতোই গীবত করা সর্বাবস্থায় হারাম। বস্তুত সিয়ামরত অবস্থায়

গীবত করলে মাংস খাওয়ার কারণে সিয়াম নষ্ট হবে বা সিয়ামের সব সাওয়াব সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে

যাবে।

সিয়াম শুধু বর্জনের নাম নয়। সকল হারাম ও মাকরুহ বর্জনের সাথে সাথে সকল ফরজ,

ওয়াজিব ও যথাসম্ভব বেশি বেশি নফল মুস্তাহাব কর্ম করাই ভালো সিয়াম। বিভিন্ন হাদিস থেকে

জানা যায় যে, রমাদান মাসে নফল-ফরজ সকলের বেশি বেশি আদায় করা দরকার।

সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, “রামাদান মাসে উমরা আদায় করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাম এর সাথে হজ করার সমতুল্য। যদি কেউ

রোজা অবস্থায় দরিদ্রকে খাবার দেয় এবং জানাজায় শরিক হয় তবে সে ব্যক্তিকে আল্লাহ

জান্নাত দান করবেন”

এছাড়া হাদিসে রমাদানে বেশি বেশি তাসবীহ-তাহলিল, দুয়া ও ইস্তেগফারের উৎসাহ দেওয়া

হয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে,

“রোজা অবস্থায় দোয়া ও ইফতারের সময় আল্লাহ দোয়া কবুল করেন।”

বিশেষভাবে দুই প্রকারের ইবাদত রামাদানে বেশি করে পালন করতে হাদীসে উৎসাহ দেওয়া

হয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,

“সাদাকার কারণে মুমিন অগণিত সাওয়াব লাভ ছাড়াও অতিরিক্ত দুটি পুরস্কার লাভ করেন।

প্রথমত সাওমের কারণে গুনাহের ক্ষমা করা হয় এবং দ্বিতীয় দানের কারনে আল্লাহর আল্লাহ

পাক বালা-মুসিবত দূর করেন।”

তিনি আরো বলেন, “দুজন মানুষের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া, অন্যায় থেকে নিষেধ করা, রাস্তা থেকে কষ্ট

দায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া, বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করা বা যেকোন ভাবে মানুষের উপকার

করায় আল্লাহর নিকট সাদকা হিসেবে গণ্য।”

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সর্বদা বেশি বেশি দান করতে ভালোবাসতেন। আর রমাদান

মাসে তার দান হতো সীমাহীন কোন যাঞ্চাকারী বা প্রার্থীকে তিনি বিমুখ করতেন না।

রামাদান আসলেই দ্রব্য মূল্য দাম বেড়ে যায়

বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ। এ দেশে অধিকাংশ ব্যবসায়ী মুসলমান। অধিকাংশ ব্যবসায়ী

রোজা রাখেন বা সাওন পালন করেন। দান করেন। কিন্তু আমাদের দান হালাল উপার্জন থেকে

হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। স্বাভাবিকের বাইরে ক্রেতাদের জুলুম করা নিষিদ্ধ-হারাম।

নিষিদ্ধভাবে লক্ষ্য টাকা আয় করে তার থেকে হাজার টাকা বের করার চেয়ে হালাল পদ্ধতিতে

হাজার টাকা আয় করে তা থেকে দুই এক টাকা ব্যয় করা অনেক বেশি সওয়াব ও বরকতের

কাজ। 

এছাড়া অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে- আমরা জানি, মানুষের

কল্যাণে ও সহমর্মিতায় যা কিছু করা হোক সবই দান। যদি কোন সৎ ব্যবসায়ী যদি রামাদানে

সুবিধার্থে তার একটি পণ্যে এক টাকা কম রাখেন। তা আল্লাহ তাআলার নিকট অত্যন্ত বড়

একটা দান হিসেবে গণ্য হবে।

রমাজানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কুরআন তিলাওয়াত 

বিগত খুতবায় আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। রমজানে দুই ভাবে কোরআন তেলাওয়াত

করতে হবে। প্রথমত কুরআনে কারীম দেখে দেখে দিবসে-রাতে তেলাওয়াত করতে হবে।

রমাদানে কয়েক খতম কোরআন তেলাওয়াতের সাথে সাথে তা বুঝার চেষ্টা করতে হবে।

বুঝার জন্য অর্থ-অনুবাদ পাঠ করতে হবে। কুরআনের অর্থ বোঝা, চিন্তা করা ও আলোচনা

করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যার জন্য অতিরিক্ত সব বরকত ও ঈমান বৃদ্ধির কথা কুরআন

ও হাদিসে বলা হয়েছে। যারা তিলাওয়াত করতে পারেন না তারা আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানে

তেলাওয়াত শিখতে শুরু করুন বা অর্থসহ তেলাওয়াতের ক্যাসেট শুনুন। 

কুরআনের দ্বিতীয় আসর হল কিয়ামুল লাইল। সালাতুল ইশার পর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত

সময়ের মধ্যে যেকোন সময় নফল সালাত আদায় করাকে রাতের সালাত বলা হয়। তাহাজ্জুদ

ও কিয়ামুল লাইল একটু ঘুমিয়ে উঠে পড়া যায়। কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ সারা বছরই

আদায় করা দরকার।

রমজানের কিয়ামের বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

 من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه-

“যে ব্যক্তি খাঁটি ঈমান ও এখলাসের সাথে, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমাদানে

কেয়ামুল লাইল আদায় করবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে।” সহীহ বুখারী ১/২২,

মুসলিম ১/৫২৩) 

রাসুল (সাঃ) রমাদান ও গাইর রমাদান সর্বদা প্রতিরাতে মধ্যরাত থেকে শেষ রাত পর্যন্ত চার

পাঁচ ঘন্টা ধরে কেয়ামুল লাইল আদায় করতেন। অনেক সময় দুই বা চার রাকাতে দীর্ঘ চার

পাঁচ ঘন্টা ধরে আট বা দশ রাকাত সালাতুল লাইল এবং তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন।

রমাদানের সাহাবীগণ তার সাথে জামাতে কেয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ আদায় করতে আগ্রহী

ছিলেন। কিন্তু এটা ফরজ হওয়ার ভয়ে তিনি জামাতে আদায় না করে ঘরে পড়তে উপদেশ

দেন। সে সময় অধিকাংশ সাহাবী কুরআনের পূর্ণ বা আংশিক হাফিয ছিলেন। এজন্য তারা

প্রত্যেকে ঘরে ঘরে যার যার মত তা আদায় করতেন। পরে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

তারা কুরআনের হাফেজ না হওয়াতে হাফেজদের পিছনে কেয়াম করতে চেষ্টা করতেন।

এজন্য মসজিদে নববীতে সালাতুল এশার পর ছোট ছোট জামাত শুরু হতো। তা দেখে ওমর

(রা) বলেন, “মানুষেরা দিবসে রোজা রাখে এবং পরিশ্রম করে কিন্তু তারা কুরআনের হাফেজ না হওয়াতে

রাতের কিয়াম ভালোভাবে আদায় করতে পারে না। এজন্য তিনি এশার পর জামাতে তারাবি

আদায়ের নির্দেশ করেন। মহিলাদের জন্যও এ ব্যবস্থা করা হতো। ওসমান ও আলী (রা)-এর

সময়ও এভাবে জামাতে তারাবীহ আদায় করা হতো।” (বায়হাকী, সুনানুল কুবরা, দ্বিতীয়

খন্ড ৪৯৩)

এর সময়ে ৮ ও ২০ রাকাত তারাবি পড়া হত বলে সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।  এছাড়া বিভিন্ন

হাদীস থেকে জানা যায়, সাহাবী-তাবিয়ীগণের সময় এশার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তারাবিহের

জামাত চলতো এবং তারা প্রত্যেক রাকাতে এক দুই পারা কোরআন পাঠ করতেন। এ থেকে

বোঝা যায় যে, প্রথম দিকে আট রাকাত তারাবির আদায় করা হতো। প্রত্যেক রাকাতে তারা

কোরআন পাঠ করতেন এবং এশার পর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত তারা এভাবে সালাত আদায়

করতেন। প্রতি রাকাতে আধা ঘন্টা বা তার বেশি দাঁড়াতে কষ্ট। এজন্য তারা এরূপ ৫ ঘন্টা ধরে

২০ রাকাত পাঠ করতেন রাকাতের সংখ্যা বাড়াতে দাঁড়ানো কষ্ট কিছুটা কম হতো।  তাহলে

কেয়ামুল লাইলের মূল সুন্নত হলো, নামাজে দাঁড়িয়ে কোরআন তেলাওয়াত করা। 

বর্তমানে আমরা কুরআন তেলাওয়াত ও শ্রবণের চেয়ে সংখ্যা গণনা করা ও তাড়াতাড়ি শেষ

করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 من قام مع الإمام حتى ينصرف كتب له قيام الليلة-

“যদি কেউ ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত কেয়ামুল লাইল বা তারাবীহ আদায় করে তবে সে সারা

রাত কেয়ামুল লাইলের সওয়াব লাভ করবে।” (সুনানে তিরমিযী ৩/১৬৯)

পরবর্তী জামানার মানুষের প্রায় এক ঘন্টা ধরে চার রাকাত তারাবির আদায় করে এরূপ কিছু

সময় বিশ্রাম করতেন। এ সময় নিরবে বিশ্রাম করা যায় বা কোরআন পাঠ, দো’আ-জিকির,

দরুদ পাঠ বা অন্য কোন আমল করা যায়। 

এ বিশ্রামের সময় আমাদের সমাজের যে দোয়া ও মোনাজাত প্রচলিত আছে। তা কোন

হাদিসে বা ফিকহের গ্রন্থ গুলিতে পাওয়া যায় না। দোয়া ও মোনাজাতটি বানোয়াট। যার কোন

ভিত্তি নেই। এর অর্থে কোন দোষ নেই। তাই এসব দোয়া পড়া অনুচিত।

এ সময় তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-জিকির, দরুদ ইত্যাদি পড়াই উত্তম। রাসূল (সা)-এর

সাহাবাগণ তিনদিন বা ১০ দিনে তারাবির জামাতে কুরআন খতম করতেন। আর আমরা

পুরো রমজানে খতম করতেও কষ্ট পাই। তারা ৫-৬ ঘন্টা ধরে তারাবি পড়তেন। আমরা এক

ঘন্টাও দাঁড়াতে চাই না। কুরআনের সাথে এর চেয়ে বড় বেয়াদবি আর কি হতে পারে? ইমামের

সাথে নিয়ত করুন এবং পুরো কুরআন মহাব্বতের সাথে শুনুন। সময় তো চলেই যাবে হয়তো এভাবে কুরআন শোনার সময় আর পাবেন না। আল্লাহ আমাদের সিয়াম ও কিয়াম কবুল করুন। আ-মী-ন।

সাত বছর থেকে ছেলে মেয়েদের নামাজ পড়া, দশ বছর হলে এ বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন

করা ফরজ। নামাজ পড়লে, রোজা রাখলে, তারাবিতে শরিক হলে ছেলে-মেয়েরা যেমন স্বাদ

লাভ করবে তেমনি তাদের পিতা-মাতারাও বরকত লাভ করবেন। এছাড়া ছেলে মেয়েরা

আজীবন যত নামাজ-রোজা তাসবীহ-তাহলিল, কুরআন পাঠ, জিকির ইত্যাদি ইবাদত করবে

এসবের সমান সাওয়াব পিতামাতাও লাভ করবে। 

সুতরাং ছেলেমেয়েরা আমাদের হৃদয়ের শান্তি। আসুন রমজানে তাদেরকে শরিক করি।

তাদেরকে সাওম পালন করতে উৎসাহী করি। সাত বছর বা তার বেশি বসে ছেলেমেয়েদেরকে

এসব জানাতে হবে। তাদেরকে নেককার রূপে গড়ে তুলতে পারলে আমরা দুনিয়াতে যেমন

আমাদের হৃদয়ের শান্তি লাভ করব; জান্নাতেও তেমনি আমাদের হৃদয়ের শান্তি হবে। আল্লাহ

পাক আমাদের সার্বিক ইবাদত-বন্দেগী, সালাত-সাওম, দান-সাদকা সব কিছু কবুল করুন।

আ-মী-ন!

Visit Our English Site Click Here 



Thanks for reading. جزاك الله خيرا 


Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ১১ এপ্রিল, ২০২৩ এ ৯:৩১ AM

    মাশাআল্লাহ

Add Comment
comment url