সালাত শুরুর দো‘আ/ ছানা
সালাত শুরুর দো‘আ/ ছানা
(১)
আবূ হুরায়রা (রাঃ)
বলেন, রাসূল (ছাঃ)
তাকবীরে তাহরীমাহ্ এবং ক্বিরআতের মধ্যবর্তী সময়ে কিছু সময় চুপ থাকতেন। আমি একবার বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরআন হৌক,
আপনি যে তাকবীর ও ক্বিরআতের মাঝে চুপ থাকেন,তখন কী বলেন? তিনি বললেন যে, আমি তখন বলি,
اَللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ
الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اَللَّهُمَّ نَقِّنِيْ مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَ بْيَضُ مِنَ
الدَّنَسِ، اَللَّهُمَّ اغْسِلْنِيْ مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَآءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ.
অর্থ-হে আল্লাহ্! আমি ও আমার পাপসমূহের মাঝে দূরুত্ব সৃষ্টি করে দাও,
যেরূপ দূরুত্ব সৃষ্টি করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে। হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপসমূহ হতে পরিচ্ছন্ন কর, যেরূপ পরিচ্ছন্ন করা হয় ময়লা থেকে সাদা কাপড়কে। হে আল্লাহ্! তুমি আমার পাপসমূহ ধুয়ে ফেল পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা। (ছহীহ্ বুখারী, হা/৭৪৪; ছহীহ্ মুসলিম, হা/১৩৮২;
মিশকাত,হা/৮১২)
(২)
‘আয়েশাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
যখন সলাত শুরু করতেন তখন বলতেনঃ
سُبْجَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَي
جَدُّكَ وَلآَ إِلَهَ غَيْرُكَ.
অর্থ-হে আল্লাহ্! প্রশংসা সহকারে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তোমার নাম
মঙ্গলময় হউক, তোমার নাম সুউচ্চ হউক। তুমি ব্যতীত কোন মা‘বুদ (উপাস্য) নেই। (তিরমিযি, হা/২৪৩;
মিশকাত,হা/৮১৫; সনদ সহীহ)
(৩)
আলী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন সলাত শুরু করতেন, তখন তাকবীরে
তাহরীমার পর বলতেনঃ
وَجَّهْتُ
وَجْهِيْ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّ مَا اَنَا مِنَ
الْمُشْرِكِيْنَ، إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ ِللهِ رَبِّ
الْعَالَمِيْنَ، لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَ اَنَا مِنَ
الْمُسْلِمِيْنَ، اَللَّهُمَّ
اَنْتَ الْمَلِكُ، لآ إِلَهَ إِلََّّا اَنْتَ، اَنْتَ رَ بِّي وَ اَنَا عَبْدُكَ، ظَلَمْتُ نَفْسِيْ وَاعْتَرَفْتُ
بِذَنْبِيْ، فَاغْفِرْلِيْ ذُنُوْبِيْ جَمِيْعًا، اَنَّهُ لَا يَغْفِرُ
الذُّنُوْبَ إِلََّّا اَنْتَ، وَاهْدِنِيْ لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ لَا يَهْدِيْ
لِاَحْسَنِهَا إِلََّّا اَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّيْ سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ
عَنِّيْ سَيِّئَهَا إِلََّّا اَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، والْخَيْرُ كُلُّهُ
فِيْ يَدَيْكَ، وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ، اَنَابِكَ وَإِلَيْكَ تَبَارَكْتَ
وَتَعَالَيْتَ، اَسْتَغْفِرُكَ وَ اَتُوْبُ إِلَيْكَ.
অর্থ-আমি আমার মুখমন্ডল ফিরাচ্ছি তাঁর দিকে, যিনি আসমান ও
যমিনসমূহ সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নেই। নিশ্চয়ই আমার ছালাত, আমার
’ইবাদত বা কুরবানী,আমার জীবন, আমার মরণ আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। আর এ
জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত। হে আল্লাহ! তুমিই
বাদ্শাহ্, তুমি ব্যতীত কোন মা‘বুদ নেই।তুমি আমার প্রভূ, আর আমি তোমার দাস। আমি
আমার উপর যুলূম করেছি। তাই আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমার সমস্ত
অপরাধ ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতীত অন্য কেউ অপরাধ ক্ষমা করতে পারে না। আর আমাকে
চালিত কর উত্তম চরিত্রের পথে, তুমি ব্যতীত অন্য কেউ উত্তম চরিত্রের পথে চালিত করতে
পারেনা। তুমি দূরে রাখ আমার হতে মন্দ আচরণকে, তুমি ব্যতীত অন্য কেউ আমাকে উহা হতে
দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত আছি তোমার নিকটে এবং প্রস্তুত আছি
তোমার আদেশ পালনে। কল্যাণ সমস্তই তোমার হাতে এবং অকল্যাণ তোমার উপর বর্তায় না। আমি
তোমার সাহায্যেই প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করব। তুমি মঙ্গলময়,
তুমি উচ্চ। আমি তোমার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে ফিরে
যাচ্ছি। (ছহীহ্ মুসলিম,হা/১৮৪৮;
মিশকাত,হা/৮১৩)
(৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)
বলেন, নবী
করীম (ছাঃ)
যখন রাতে তাহাজ্জুদে দাঁড়াতেন তখন পড়তেনঃ
اَللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ قَيِّمُ
السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ نُوْرُ
السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَ لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ مَالِكُ
السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَ لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ الْحَقُّ،
وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَ لِقَائُكَ حَقٌّ، وَّ قَوْلُكَ حَقٌّ، وَّ الْجَنَّةُ
حَقٌّ، وَّ النَّارُ حَقٌّ، وَّ النَّبِيُّوْنَ حَقٌّ، وَّ وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، وَّ
السَّاعَةُ حَقٌّ، اَللَّهُمَّ لَكَ اَسْلَمْتُ، وَ بِكَ آمَنْتُ، وَعَلَيْكَ
تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ اَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَ إِلَيْكَ حَاكَمْتُ،
فَاغْفِرْلِيْ مَا قَدَّمْتُ، وَمَا اَخَّرْتُ، وَمَا اَسْرَرْتُ، وَمَا
اَعْلَنْتُ، وَمَا اَنْتَ اَعْلَمُ بِهِ مِنِّي، اَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَاَنْتَ
الْمُئَخِّرُ، لآ اِلَهَ إِلَّا اَنْتَ وَ لَآ إِلَهَ غَيْرُكَ.
অর্থ- হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তোমারই জন্য। আসমান, যমীন এবং এদের মধ্যস্থিত যা কিছু আছে সবকিছুর তুমিই অধিকর্তা। প্রশংসা মাত্রই তোমার। আসমান, যমীন এবং এদের মধ্যস্থিত যা কিছু আছে, তুমি সবকিছুর নূর বা জ্যোতি। (হে আল্লাহ্!) প্রশংসা মাত্রই তোমার। আসমান, যমীনের রাজত্ব তোমার। সকল গুণকীর্তন তোমার জন্যই। তুমি সত্য, তোমার অঙ্গীকার সত্য, তোমার বাণী সত্য, তোমার দর্শনলাভ সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মদ (ছাঃ) সত্য এবং ক্বিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ্! তোমার নিকটে আত্মসমর্পন করলাম, তোমারই উপর নির্ভরশীল হলাম, তোমার উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করলাম, তোমার দিকে প্রত্যাবর্তিত হলাম, তোমারই সাহায্যের প্রত্যাশায় শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলাম এবং তোমাকেই বিচারক নির্ধারণ করলাম। অতএব আমার পূর্বের ও পরের গোপনীয় এবং প্রকাশ্য দুষ্কর্মসমূহ মাফ করে দাও। তুমি ব্যতীত ‘ইবাদতের যোগ্য কোন মা‘বুদ নেই। (ছহীহ বুখারী, হা/১১২০; ছহীহ্ মুসলিম, হা/১৮৪৪; মিশকাত, হা/১২১১)