১৩ শ্রেণির মানুষের ইবাদত কবুল হয় না
এমন কিছু হতভাগা ব্যক্তি আছে যারা আমল করে অথচ তা আল্লাহর দরবারে কবুল তথা গৃহীত হয় না।
আল্লাহর নিকট নেক আমল গৃহীত হওয়ার জন্য কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হলো-
(১) আমলকারীকে অবশ্যই মুমিন তথা ইমানদার হবে।
(২) আমলটি নাবী মুহাম্মদ (ছাঃ)-এর সুন্নাহ্ বা পদ্ধতি অনুযায়ী সম্পন্ন হতে হবে। কোন পীর, মাশায়েখ বা অন্য কারো পদ্ধতিতে নয়।
(৩) আমল করতে হবে ইখ্লাস তথা নিষ্ঠার সঙ্গে। শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ও তা‘য়ালার সন্তুষ্টির জন্য, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়।
এছাড়া ব্যক্তির কিছু আমল-আখলাকগত ত্রুটির কারণেও আমল তথা ইবাদত বন্দেগী গৃহীত হয় না। উপরোক্ত শর্তসমূহ ঠিক থাকা সত্ত্বেয়ও ১৩টি কারণে আমল গ্রহণযোগ্যতা হারায় তথা কবুল হয় না। অতি সংক্ষেপে নিম্নে তা তুলে ধরা হলোঃ
(১) মুরতাদ: অর্থাৎ, যে ব্যক্তি মুসলিম হওয়ার পর পুনরায় ইসলাম ত্যাগ করে মুশরিক বা নাস্তিক হয়ে যায়। সুনানে নাসায়ীতে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْ مُشْرِكٍ أَشْرك بعد إسلامَه عملا، حتي يفارقَ المشركين إلى المسلمين.
অর্থ- যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর পুনরায় মুশরিক হয়ে গেছে সে মুশরিকদের সংগ ত্যাগ করে মুসলিমদের নিকট না আসা অবধি আল্লাহ তার কোন নেক আমল কবুল করবেন না।
(২) অপবিত্র ব্যক্তির সালাত কবুল করা হয় না।
(৩) হারাম উপার্জন দিয়ে দান করলে তা কবুল করা হবে না। অত্র ২ ও ৩ নং –এর ব্যাপারে নাবী (ছাঃ) বলেছেন,
لَا يَقْبَلُ اللهُ صلاةً بغير طهورٍ ولا صدقةٍ من غُلول.
অর্থ- পবিত্রতা অর্জন ব্যতিত কারো সালাত কবুল হবে না এবং আত্মসাতের অর্থ দিয়ে ছাদকা করলে তা কবুল করা হবে না। (সুনানে আবূ দাউদ)
(৪) ঐ মহিলার সালাত/নেকআমল কবুল হবে না যে মহিলা পূর্ণ পর্দা তথা পুরো শরীর ঢাকিয়ে সালাত আদায় করে না। কেননা, নাবী (ছাঃ) বলেছেন,
لَا يَقْبَلُ اللهُ صَلَاةَ حَائِضٍ إِلَّا بِخِمَارٍ.
অর্থ- প্রাপ্ত বয়স্কা কোন মেয়ে বা নারীর খিমার তথা পর্দা করার বিশেষ পোশাক
ব্যতীত সালাত হবে না। (সুনানে আবূ দাউদ)
(৫) ঐ মহিলার সালাত/নেকআমল কবুল হয় না যে মহিলা সুগন্ধি মেখে মাসজিদে যায়। কেননা, নাবী (ছাঃ) বলেছেন,
যে নারী সুগন্ধি বা সেন্ড (পারফিউম) ব্যবহার করে সালাত আদায় করতে মসজিদে
যায় তার সালাত হয় না যতক্ষণ না উহা ধুয়ে ফেলা হয়।
(সহীহ ইবনে হুযায়মা) {উল্লেখ্য, মাসজিদে গেলে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে বাজারে গেলে আর কি হতে পারে?}
(৬) ঐ ইমাম-এর সালাত/নেকআমল কবুল হয় না যাকে তার মুসল্লিগণ যুক্তিসংগত কারণে অপছন্দ করে। অর্থাৎ, বিদআতী ও বদ অভ্যাসী হওয়ায় মুসল্লিগণ তাকে চায় না তা সত্ত্বেয়ও তিনি দায়িত্বে থাকেন।
(৭) ঐ মহিলার সালাত/নেকআমল কবুল হয় না যে মহিলা তার স্বামীকে বেজার রেখে রাত্রি কাটায়।
(৮) ঐ গোলাম বা কৃতদাসের সালাত/নেকআমল কবুল হয় না যে তার মালিকের অনুমতি ছাড়াই পালিয়ে যায়। অত্র ৬,৭ ও ৮ নং এর ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
“ঐ ইমাম-এর সালাত/নেকআমল কবুল হয় না যাকে তার মুসল্লিগণ যুক্তিসংগত কারণে অপছন্দ করে। ঐ স্ত্রী যিনি স্বামীকে বেজার রেখে রাত কাটিয়ে দেয়। ঐ গোলাম যে তার মনিব থেকে পালিয়ে যায়। (অন্য বর্ণনায়, ঐ দুই ভাই যারা পরস্পর বিবাদ বা মারামারিতে লিপ্ত)।” (ছহীহ্ ইবনে হিব্বান, ইবনে মাজাহ ইত্যাদি)
(৯) ঐ ব্যক্তির সালাত/নেকআমল কবুল হয় না যে ব্যক্তি মদীনা শহরে ফিৎনা বা অশান্তি সৃষ্টি করে। অথচ সেখানে দাজ্জালও প্রবেশ করবে না। এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
المدينة حرام ما بين عير ألى السَور فمن أحدثَ فيه حَدَثا أو أوعى مٌحدِثًا فعليه لعنةُ اللهِ والملاءكةِ
অর্থ- মদিনা একটি অতি পবিত্র শহর যে ব্যক্তি উহাতে ফিতনা-ফাসাদ বা বিদআত সৃষ্টি করবে অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দিবে তার প্রতি আল্লাহর লানত, ফিরিশতাদের লানত এবং সমগ্র মানবের লানত। আল্লাহ তার কোন ফরয-নফল কোন আমল কবুল করা হবে না। (ছহীহ্ মুসলিম ও অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত)
(১০) মা-বাবার অবাধ্য সন্তান যে তাঁদের বৈধ নির্দেশনা মেনে চলে না, মা- বাবাকে দূরে রেখে স্ত্রী বা বন্ধু-বান্ধবকে নিকটে আনে তার সালাত কবুল হবে না।
(১১) ঐ ব্যক্তির সালাত/নেকআমল কবুল হয় না যে ব্যক্তি দান করে খোঁটা দেয়। (দান করতে হবে নি:স্বার্থভাবে, থেঙ্ক ইউও আশা করা যাবে না।)
(১২) ঐ ব্যক্তির সালাত/নেকআমল কবুল হয় না যে ব্যক্তি তাকদীরকে অস্বীকার করে। উপরোক্ত ১০, ১১ ও ১২ নং এর বিষয়ে রাসূল (ছা) বলেন,
ثلاثٌ، لا يقبل الله لهم صرفا ولا عدلا عاقٌ منَّان ومكذب بالقدر
অর্থ- তিন ব্যক্তির ফরয-নফল কোন আমল আল্লাহ কবুল করবেন না। তারা হলেন- পিতামাতার অবধ্য সন্তান দান করে খোঁটা দানকারী এবং তাকদীরের প্রতি মিথ্যারোপকারী বা অস্বীকারকারী। (ছহীহুল, জামে‘, তাবরানী)
(১৩) ঐ শাসকের সালাত কবুল হবে না যিনি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না।
لا يقبلُ اللهُ صلاةَ إمامٍ حاكمَ بغير ما أنزل الله
অর্থ- ঐ শাসকের ফরয-নফল কোন আমল আল্লাহ কবুল করবেন না। যিনি আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তদানুযায়ী শাসনকার্য সম্পন্ন করেন না। (মুসদারেকে
হাকেম)
Visit Our English Site : Click Here
Thanks for reading. جزاك الله خيرا
الحمدلله