সালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত
ইমানের পর মুমিন নর ও নারীর উপরে সবচেয়ে বড় ফরয ইবাদত হলো, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত সময়মত আদায় করা। আরবী ভাষায় সালাত অর্থ প্রার্থনা। ইসলামের পরিভাষায় সালাত অর্থ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর শেখানো নির্ধারিত পদ্ধতিতে রুকু সাজদার মাধ্যমে আল্লাহর যিকর ও দোয়া করা। কুরআন ও হাদীসে এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব আর কোনো ইবাদতকে দেওয়া হয় নি। কুরআনে প্রায় ৮০ স্থানে আল্লাহ সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন। অসংখ্য হাদীসে সালাতের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
সালাত হলো ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। সালাত এমন একটি ফরয ইবাদত যার কোন বিকল্প নেই। ইসলামে সকল বিধান সহজ করে দেওয়া হয়েছে। একজন অসুস্থ মানুষ সাওম (রোযা) কাযা করতে পারেন এবং পরে রাখতে পারেন। একেবারে অক্ষম মানুষ ফিদইয়া-কাফ্ফারা দিতে পারেন। কিন্তু সালাতের ক্ষেত্রে সেই বিধান নেই। সালাতকে অন্যভাবে সহজ করা হয়েছে। তা হলো মুমিন যেভাবে পারেন তা আদায় করবেন। পূর্ণ নিয়মানুসারে। না হলে দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, দৌঁড়াতে দৌড়াতে, যানবাহনে আরোহণ রত অবস্থায়, পোশাক পরিধান করে, উলঙ্গ হয়ে… (পরিস্থিতির শিকার হয়ে) যে ভাবে সম্ভব মুমিন তাঁর প্রভূর দরবারে হাযিরা দেবেন। কোনো সূরা, ক্বিরআত বা দোয়া না জানা থাকলে শুধুমাত্র আল্লাহু আকবার বলে বলে বা তাসবীহ্-তাহলীল-এর মাধ্যমে সালাত আদায় করতে হবে। একজন মুমিনের যতক্ষণ হুশ রয়েছে, ততক্ষণ তার দায়িত্ব হলো সময় মত সালাত আদায় করা।
সালাতকে আমরা দায়িত্ব বা কর্তব্য মনে করি। আসলে সালাত কেবল দায়িত্ব-কর্তব্যই নয়, বরং সুবর্ণ সুযোগ। আল্লাহ আমাদের সুযোগ দিয়েছেন, দিনের মধ্যে পাঁচবার তাঁর সাথে কথা বলে, মনের সকল আবেগ তাঁকে জানিয়ে, তাঁর রহমত, বরকত লাভ করে আমরা ধন্য হব।
সালাতিই সকল সফলতার চাবিকাঠি। এমর্মে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন:
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤمِنُونَ الَّذِيْنَ هُمْ فِى صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ-
“মুমিনগণ সফলকাম হয়েছেন, যারা অত্যন্ত বিনয় ও মনোযোগিতার সাথে সালাত আদায় করেন।” (সূরা মুমিনূন: ১-২)
সালাত গোনাহ্ মার্জনার অন্যতম উপায়। রাসূলুল্লাহ্ (ছা) বলেছেন, “যদি তোমাদের কারো বাড়ির দরজায় একটি নদী থাকে, যেখানে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে তার দেহে কি ধুলি ময়লা অবশিষ্ট থাকবে? সাহাবীগণ বলেন, না। তার ধুলিময়লা কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতও অনূরূপ। এগুলির মাধ্যমে আল্লাহ পাপরাশি ক্ষমা করেন।” (সহীহ্ বুখারী ১/১৯৭; সহীহ্ মুসলিম ১/৪৬২)
যে সালাত আদায় করে না সে কফির হয়ে যায়। রাসূল (ছা) বলেন, مَنْ تَرَكَ الصَلَاةَ فَقَدْ كَفَرَ “যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে কফির হয়ে গেল। (সহীহ্ ইবনু হিব্বান ৪/৩২৩)
ফরয সালাত কাযা করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (ছা) বলেন, “ইচ্ছাপূর্বক এক ওয়াক্ত ফরয সালাতও পরিত্যাগ করবে না। কারণ যে বক্তি ইচ্ছাপূর্বক এক ওয়াক্ত ফরয সালাত পরিত্যাগ করবে, সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের যিম্মা থেকে বহিস্কৃত হবে।” (সহীহুত তারগিব ১/১৩৮-১৩৯)
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে বিষয়ের হিসাব নেওয়া হবে তা হলো সালাত। রাসূল (ছা) বলেন, “কিয়ামতের দিন বান্দাকে সর্বপ্রথম তার সালাত সম্পের্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সালাত টিকলে তার অন্য সকল আমল টিকে যাবে। আর সালাতই যদি নষ্ট হয় তবে সে নিরাশ ও ধ্বংসগ্রস্ত হবে। যদি তার ফরয থেকে কিছু কম পড়ে তবে আল্লাহ বলবেন, দেখ আমার বান্দার কোনো নফল আছে কিনা, তখন তার নফল সালাত দিয়ে ফরযে ত্রুটিবিচ্যুতি পূরণ করা হবে। অতপর তার সকল আমল এরূপ হবে।” (সহীহুত তারগিব ১/৯০)
সালাত জামাআতের সাথে আদায় করতে হবে। এমর্মে ইবনু মাসঊদ (রা) বলেন, “যার পছন্দ হয় যে, সে আগামীকাল মুসলিম হয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে সে যেন এ সকল সালাতগুলি সদাসর্বদা নিয়মিত সেখানে আদায় করে যেখানে এগুলির জন্য আযান দেওয়া হয়। কারণ আল্লাহ তোমাদের নবী (ছা)-এর জন্য কিছু হেদায়েতের সুন্নাতের (রীতির) বিধান প্রদান করেছেন। আর এ সকল সালাতগুলি নিয়মিত জামাতে আদায় করা হেদায়েতের (সুন্নাতের) অন্যতম। যদি তোমরা তোমাদের বাড়িতে সালাত আদায় কর, যেরূপ এই পশ্চাতপদ ব্যক্তি নিজ বাড়িতে সালাত আদায় করে, তাহলে তোমরা তোমাদের নাবী (ছ)-এর সুন্নাত পরিত্যাগ করবে। আর যদি তোমরা তোমাদের নাবী (ছ)-এর সুন্নাত পরিত্যাগ কর তাহলে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। যখনই কোনো ব্যক্তি সুন্দর রূপে ওযু বা গোসল করে পবিত্র হয় এবং এরপর সে এ সকল মসজিদের যে কোনো একটি মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে তখন আল্লাহ তার ফেলা প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য একটি পণ্য লিখেন, তাকে একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি পাপ ক্ষমা করে দেন। আমরা আমাদেরকে দেখেছি যে, শুধুমাত্র যে মুনাফিকের মুনাফেকী সুপরিচিত সে ছাড়া কেউই জামা‘আত থেকে পিছে পড়ত না। অনেক মানুষকে দুই ব্যক্তির কাঁধের উপর ভর করে টেনে এনে সালাতের কাতারে দাঁড় করানো হতো। (সহীহ্ মুসলিম ১/৪৫৩)
জামাতে সালাতের বিশেষ ফযিলত: (১) ইবনু উমার (রা) বলেন, রাসূল (ছা) বলেছেন, “একাকী সালাতের চেয়ে জামা‘আতে সালাতের মর্যাদা ২৭ গুণ বেশি।” (বুখারী ১/২৩১; মুসলিম ১/৪৫০)
(২) আরেক হাদীসে রাসূল (ছা) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীরসহ পরিপূর্ণ সালাত জামাতে আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহ দুইটি মুক্তি লিখে দিবেন: জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও মুনাফেবী থেকে মুক্তি।” (সহীহুত তারগীব ১/৯৮)
(৩) রাসূল (ছা) আরো বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করে বসে বসে আল্লাহর যিকির করবে সর্যোদয় পর্যন্ত, এরপর দুই রাকা‘আত যোহা বা চাশতের সালাত আদায় করবে, সে একটি হজ্ব ও একটি ওমরার সাওয়াব অর্জন করবে, পরিপূর্ণ,পরিপূর্ণ,পরিপূর্ণ (হজ্ব ও ওমরার সাওয়াব অর্জন করবে)। (সহীহুহত তারগীব ১/১১১)
এছাড়া ওযুর পরেই দুই রাক‘আত তাহিয়্যাতুল ওযু, মাসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে অন্তত দু রাক‘আত দুখুলুল মাসজিদ বা তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত নিয়মিত আদায় করার বিশেষ নির্দেশ ও ফযীলত বিভিন্ন সহীহ্ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে চলার তাওফীক প্রদান করুন। আ-মী-ন।
Visit Our English Site : Click Here
Thanks for reading. جزاك الله خيرا
Mashallah onnnnek sundor likhecen